Saturday 31 January 2015

কোন নবী কোন দেশে এসেছিলেন ?

কোন নবী কোন
দেশে এসেছিলেন ??
1. আদম (আ.) -
শ্রীলংকা
2. নূহ (আ.) -জর্ডান
3. শোয়াইব (আ.) -
সিরিয়া
4. সালেহ (আ.) -
লেবানন
5. ঈব্রাহীম (আ.) -ইরাক
6. ইসমাঈল (আ.) -
সৌদি আরব
7. ইয়াকুব (আ.) -
ফিলিস্তিন
8. হযরত মুসা(আঃ)
- মিশর।
9. ইয়াহ ইয়া (আ.) -
ফিলিস্তিন
10. জাকারিয়া(আ.) -
ফিলিস্তিন
11. ইসহাক (আ.) -
ফিলিস্তিন
12. ইউসুফ (আ.) -
ফিলিস্তিন
13. লুত (আ.) -জর্ডান ,ইরাক
14. আইয়ুব (আ.) -
জর্ডান
15. হুদ (আ.) -ইয়েমেন
16. মুহাম্মদ (সা.) -সৌদি আরব

Sunday 4 January 2015

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন পাপ’-সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল-আশেখThe Prophet (saw) said: "Convey (knowledge) from me even if it is just one aayah..." [Bukhari, 3461]


ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন পাপ’
_____সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল-আশেখ।
বিশ্ব নবীর (সা.) জন্মদিন ও ওফাত দিবস একদিনেই। দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক মুসলিম দেশ। কিন্তু সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল-আশেখ বলেছেন, এমন উদযাপন করা রীতিমত পাপ। এ ব্যাপারে তিনি মুসলমানদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, এটি একটি কুসংস্কারচ্ছন্ন অনুশীলন এবং ধর্মে অবৈধভাবে তা ঢুকে পড়েছে।
শুক্রবার জুম্মার খুৎবায় গ্রান্ড মুফতি আরো বলেন, নবীর (সা.) জন্মদিন উদযাপন বিদআত বা পাপপূর্ণ আচার। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকে তা ছিল না। অন্তত তিন শতাব্দী পর থেকে এটি ইসলামে ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, নবীর (সা.) শিক্ষা হচ্ছে তার সুন্নাহ অনুসরণ করা। তার শিক্ষা অনুশীলন করা। মেনে চলা। রিয়াদে তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে জুম্মার খুৎবায় গ্রান্ড মুফতি এ কথা বলেন।
গ্রান্ড মুফতি বলেন, যারা অন্যকে নবীজির (সা.) জন্মদিন পালন করার আহবান জানায় তারা শয়তান ও দুর্নীতগ্রস্ত। নবীজিকে (সা.) সত্যিকারভাবে ভালবাসতে হলে তার রেখে যাওয়া শিক্ষাকে অনুসরণ করতে হবে। সুন্নাহকে অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপনই নবীজিকে ভালবাসা।
জুম্মার খুৎবায় গ্রান্ড মুফতি বলেন, আল্লাহ বলেছেন,
“ বল : যদি তুমি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন এবং তোমার পাপ ক্ষমা করে দেবেন। ” মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে নবীজিকে (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করা। আল্লাহ নবীজিকে (সা.) সারাবিশ্বে পথ প্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। মুসলমানদের কর্তব্য তাকে ভালবেসে অনুসরণ করা।
মুফতি বলেন, যারা নবীজির (সা.) শিক্ষাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেয় তাদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করা অন্য মুসলমানদের দায়িত্ব। নবীজির (সা.) শিক্ষাকে অপব্যবহার থেকে বিরত থাকাও প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য বলে মুফতি বলেন, নবীজিকে (সা.) ভালবাসতে হলে এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে।
পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে গ্রান্ড মুফতি বলেন, মুসলমানদের সন্তান সন্ততি, ভাই, পিতা, মাতার চেয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা:) কে অধিক প্রিয় মনে করা উচিত। আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) কে সব কাজে অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেন না।-আরব নিউজ


(2)Bangla-Explaination;=


‎ঈদে মিলাদুনবী এর কিছু হাদীসের এবং কিছু আছারের পর্যালোচনা । 

এই বিদআতী অনুষ্ঠানের সপক্ষে যে কটি দলিল আসে তা মূলত দুটি কিতাব থেকে গ্রহণ করা হয় । 

(১) ইমাম আহমাদ বিন হাজার আল হায়তামি আল শাফেয়ী (রহঃ) [ أحمد بن حجر الهيتمى الشافعى ]  এর আল নিয়ামাতুল কুবরা (النعمة الكبرى على العالم) । 
এবং 
(২) হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) [أَبُو الخَطَّاب ابْنُ دِحْيَة] এর তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর (التنوير في مولد البشير النذير) থেকে । 

কিন্তু আফসোস !! 

আল্লাহ বলছেন ,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ 
হে মুমিনগন ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশতঃ  তোমরা কোন সম্প্রদায়কে কষ্ট না পৌঁছাও যাতে পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্যে লজ্জিত হয়ে যাও । 

(সূরা হুজুরাত , আয়াত ৬) 

রাসূল (সাঃ) বলছেন ,
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ 
 “কোন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাই শোনে তাই যাচাই না করেই অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয়।”
 (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৫৬১৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯২) 

উক্ত আয়াত এবং হাদীস এতাই প্রমান করে প্রতিটি হাদীসের বা দলিলের তাহকীকের প্রয়োজন । বীনা তাহকীকে কোন দলিল গ্রহণযোগ্য নয় । 

তাদের দলিলসমূহের তাহকীক করে দেখা গেল - 

(১) আল নিয়ামাতুল কুবরা (النعمة الكبرى على العالم) থেকে সেসকল দলিল এসেছে তার কোনই সনদ নেই । বিস্তারিত দেখুন - 
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=730401253722235&set=a.304403826321982.65190.100002571009936&type=1&theater

(২) তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর (التنوير في مولد البشير النذير) থেকে যে সকল দলিল এসেছে সেগুলি এরকম - 

----------------------------------------------------------------------------------------------
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত ও সালাম তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এসেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
--------------------------------------------------------------------------------------------

এখন আপনি যদি ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী বিন ফারিস (রহঃ) এর الأعلام للزركلي পড়েন সেখানে  তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর এর লেখক হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) [أَبُو الخَطَّاب ابْنُ دِحْيَة] এর জীবনী সম্পর্কে জানতে পারবেন । সেখানে উল্লেখ আছে -

ابن دحية الكَلْبي
(544 - 633 هـ = 1150 - 1236 م)
عمر بن الحسن بن علي بن محمد، أَبُو الخَطَّاب، ابن دحية الكلبي: أديب، مؤرخ، حافظ للحديث، من أهل سبتة بالأندلس. ولي قضاء دانية. ورحل إلى مراكش والشام والعراق وخراسان، واستقر بمصر. وكان كثير الوقيعة في العلماء والأئمة فأعرض بعض معاصريه عن كلامه، وكذبوه في انتسابه إلى " دحية " وقالوا: إن دحية الكلبي لم يعقب. وهجاه ابن عنين. وتوفي بالقاهرة.
من تصانيفه " المطرب من أشعار أهل المغرب - ط " والآيات البينات - خ " و " نهاية السول في خصائص الرسول - خ " و " النبراس في تاريخ خلفاء بني العباس - ط " و " التنوير في مولد السراج المنير " و " تنبيه البصائر - خ " في أسماء الخمر، و " علم النصر المبين في المفاضلة بين أهل صفين - خ "
 (1) .

(1) وفيات الأعيان 1: 381 ونفح الطيب 1: 368. وميزان الاعتدال 2: 252 ولسان الميزان 4: 292 وآداب اللغة 3: 57 وشذرات الذهب 5: 160 والنبراس: مقدمة الناشر.

হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) এর জন্ম ৫৪৪ হিজরিতে । 

এখন প্রশ্ন হল তিনি তাঁর কিতাবে কোন সনদে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং সাহাবী আবু দারদা (রাঃ)  থেকে বর্ণিত এই হাদীসগুলি পেলেন সেটা উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন ? 

যারা ঈদে মিলাদুনবির পক্ষে এই সকল কিতাব থেকে দলিল দেবেন তারা অবশ্যই সনদ দেখাবেন ।

যাযাকআল্লাহ খায়রান ।‎
ঈদে মিলাদুনবী এর কিছু হাদীসের এবং কিছু আছারের পর্যালোচনা ।
এই বিদআতী অনুষ্ঠানের সপক্ষে যে কটি দলিল আসে তা মূলত দুটি কিতাব থেকে গ্রহণ করা হয় ।
(১) ইমাম আহমাদ বিন হাজার আল হায়তামি আল শাফেয়ী (রহঃ) [ أحمد بن حجر الهيتمى الشافعى ] এর আল নিয়ামাতুল কুবরা (النعمة الكبرى على العالم) ।
এবং
(২) হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) [أَبُو الخَطَّاب ابْنُ دِحْيَة] এর তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর (التنوير في مولد البشير النذير) থেকে ।
কিন্তু আফসোস !!
আল্লাহ বলছেন ,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
হে মুমিনগন ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়কে কষ্ট না পৌঁছাও যাতে পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্যে লজ্জিত হয়ে যাও ।
(সূরা হুজুরাত , আয়াত ৬)
রাসূল (সাঃ) বলছেন ,
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
“কোন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাই শোনে তাই যাচাই না করেই অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয়।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৫৬১৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯২)
উক্ত আয়াত এবং হাদীস এতাই প্রমান করে প্রতিটি হাদীসের বা দলিলের তাহকীকের প্রয়োজন । বীনা তাহকীকে কোন দলিল গ্রহণযোগ্য নয় ।
তাদের দলিলসমূহের তাহকীক করে দেখা গেল -
(১) আল নিয়ামাতুল কুবরা (النعمة الكبرى على العالم) থেকে সেসকল দলিল এসেছে তার কোনই সনদ নেই । বিস্তারিত দেখুন -
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=730401253722235&set=a.304403826321982.65190.100002571009936&type=1&theater
(২) তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর (التنوير في مولد البشير النذير) থেকে যে সকল দলিল এসেছে সেগুলি এরকম -
----------------------------------------------------------------------------------------------
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত ও সালাম তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এসেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
--------------------------------------------------------------------------------------------
এখন আপনি যদি ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী বিন ফারিস (রহঃ) এর الأعلام للزركلي পড়েন সেখানে তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর এর লেখক হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) [أَبُو الخَطَّاب ابْنُ دِحْيَة] এর জীবনী সম্পর্কে জানতে পারবেন । সেখানে উল্লেখ আছে -
ابن دحية الكَلْبي
(544 - 633 هـ = 1150 - 1236 م)
عمر بن الحسن بن علي بن محمد، أَبُو الخَطَّاب، ابن دحية الكلبي: أديب، مؤرخ، حافظ للحديث، من أهل سبتة بالأندلس. ولي قضاء دانية. ورحل إلى مراكش والشام والعراق وخراسان، واستقر بمصر. وكان كثير الوقيعة في العلماء والأئمة فأعرض بعض معاصريه عن كلامه، وكذبوه في انتسابه إلى " دحية " وقالوا: إن دحية الكلبي لم يعقب. وهجاه ابن عنين. وتوفي بالقاهرة.
من تصانيفه " المطرب من أشعار أهل المغرب - ط " والآيات البينات - خ " و " نهاية السول في خصائص الرسول - خ " و " النبراس في تاريخ خلفاء بني العباس - ط " و " التنوير في مولد السراج المنير " و " تنبيه البصائر - خ " في أسماء الخمر، و " علم النصر المبين في المفاضلة بين أهل صفين - خ "
(1) .
(1) وفيات الأعيان 1: 381 ونفح الطيب 1: 368. وميزان الاعتدال 2: 252 ولسان الميزان 4: 292 وآداب اللغة 3: 57 وشذرات الذهب 5: 160 والنبراس: مقدمة الناشر.
হাফিয আবুল খাত্তাব ইবন দিহাইঁয়া (রহঃ) এর জন্ম ৫৪৪ হিজরিতে ।
এখন প্রশ্ন হল তিনি তাঁর কিতাবে কোন সনদে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং সাহাবী আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এই হাদীসগুলি পেলেন সেটা উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন ?
যারা ঈদে মিলাদুনবির পক্ষে এই সকল কিতাব থেকে দলিল দেবেন তারা অবশ্যই সনদ দেখাবেন ।
যাযাকআল্লাহ খায়রান ।

  • Wiliam Kaizar Kaji ASSALAMU ALAIKUM MY DEAR MUSLIM BROTHERS AND SISTERS
    In Islaam There Are Only Two Eids: Eidul Fitr And Eidul Adhaa.There is no concept in Islam about Eid Milad un Nabi. Eid Milad un Nabi is Biddat. So avoid such Haram activities.
    A gesture is more than enough to the wise

    The Prophet (saw) said: "Convey (knowledge) from me even if it is just one aayah..." [Bukhari, 3461]...
  • +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
▓▓▓▒▒▒░░((( ঈদে মিলাদুন্নবী )))░░▒▒▒▓▓▓
ইসলামের প্রথম যুগগুলোর পরে মীলাদ অনুষ্ঠান বা ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনের শুরু হয়েছে। কিন্তু কবে থেকে? কে শুরু করলেন? আসুন আমরা তাদের সাথে পরিচিত হই এবং কিভাবে তাঁরা এই অনুষ্ঠান পালন করতেন তা জানার চেষ্টা করি।ইতিহাসের আলোকে যতটুকু জানতে পেরেছি, দুই ঈদের বাইরে কোন দিবসকে সামাজিক ভাবে উদযাপন শুরু হয় হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শিয়াদের উদ্দোগে। সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীতে (৯৬৩খ্রি:) বাগদাদের আববাসী খলীফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনী বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জুদ্দৌলা ১০ই মুহাররাম আশুরাকে শোক দিবস ও জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ গাদীর খুম দিবস উৎসব দিবস হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। যদিও শুধুমাত্র শিয়ারাই এই দুই দিবস পালনে অংশ গ্রহণ করেন, তবুও তা সামাজিক রূপ গ্রহণ করে। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রথম বৎসরে এই উদযাপনে বাধা দিতে পারেন নি। পরবর্তী যুগে যতদিন শিয়াদের প্রতিপত্তি ছিল এই দুই দিবস উদযাপন করা হয়, যদিও তা মাঝে মাঝে শিয়া-সুন্নী ভয়ঙ্কর সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায় [15]।ঈদে
মীলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়াগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ [16] ফাতেমী বংশের নামে আফ্রিকার উত্তরাংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। ৩৫৮ হিজরীতে (৯৬৯ খ্রি:) তারা মিশর দখল করে তাকে ফাতেমী রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন এবং পরবতী ২ শতাব্দীরও অধিককাল মিশরে তাদের শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে। গাজী সালাহুদ্দীন আইঊবীর মিশরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে ৫৬৭ হিজরীতে (১১৭২খ্রি:) মিশরের ফাতেমী শিয়া রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে [17]।
এই দুই শতাব্দীর শাসনকালে মিশরের ইসমাঈলী শিয়া শাসকগণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করতেন, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৫টি জন্মদিন পালন করতেন:
১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন,
২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন,
৩) ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মদিন,
৪) হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন ও
৫) হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন।এ ছাড়াও তারা তাদের জীবিত খলীফার জন্মদিন পালন করতেন এবং ‘‘মীলাদ’’ নামে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন (বড়দিন বা ক্রীসমাস), যা মিশরের খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তা আনন্দপ্রকাশ, মিষ্টি ও উপহার বিতরণের মধ্য দিয়ে উদযাপন করতেন [18]।
●| ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রাথমিক উদযাপন: যুগ ও প্রবর্তক পরিচিতি: হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে মিশরে এই উদযাপন শুরু হয়। এ যুগকে আববাসীয় খেলাফতের দুর্বলতার যুগ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ঐতিহাসিকগণ। আববাসীয় খেলাফতের প্রথম অধ্যায় শেষ হয় ২৩২ হি: (৮৪৭খ্রি:) ৯ম আববাসী খলিফা ওয়াসিক বিল্লাহের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এরপর সুবিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবনতির সূচনা হয়। কারণ কেন্দ্রীয় প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশাল সাম্রাজ্য বিভিন্ন ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়। এসকল রাষ্টের মধ্যে অবিরত যুদ্ধ বিগ্রহ চলতে থাকে। এছাড়া কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা লুটতরাজ চালানোর সুযোগ পায়। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যহত হয়। বিশেষ করে ৩৩৪ হি: (৯৪৫খ্রি:) থেকে বাগদাদে শীয়া মতাবলম্বী বনূ বুয়াইহ শাসকগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান, ফলে ইসলামী জ্ঞানচর্চা, হাদীস ও সুন্নাতের অনুসরণ ব্যহত হয়। রাফেযী শিয়া মতবাদের প্রসার ঘটতে থাকে। অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী জনগণ শিয়াদের বাড়াবাড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করলে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিয়া-সুন্নী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধের রূপ ধারণ করত। এ সকল সংঘর্ষ মূলত: দেশের সার্বিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটাত। আভ্যন্তরীন অশান্তি ও অনৈক্য বহির্শত্রুর আগ্রাসনের কারণ হয়। এশিয়া মাইনর, আর্মেনীয়া, ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন খ্রিষ্টান শাসক সুযোগমত ইসলামী সম্রাজ্যের অভ্যন্তরে আগ্রাসন চালাতে থাকেন। এছাড়া ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও উস্কানীমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে জ্ঞানচর্চা, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ ব্যহত হয়। অপরদিকে সমাজের মানুষের মধ্যে বিলাসিতা ও পাপাচারের প্রসার ঘটতে থাকে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইসলাম বিরোধী আচার আচরণ, কুসংস্কার, ধর্মীয় বিকৃতি ছড়িয়ে পড়ে।এই যুগের বিচ্ছিন্ন ইসলামী সম্রাজ্যের একটি বিশেষ অংশ ও ইসলামী সভ্যতার অনত্যম কেন্দ্র মিশরে ফাতেমী খলীফা আল-মুয়িজ্জু লি-দীনিল্লাহ সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদুন্নবী, অন্যান্য জন্মদিন পালন ও সে উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের শুরু করেন। তিনি ৩৫৮ হিজরীতে মিসর অধিকার করেন এবং কায়রো শহরের পত্তন করেন। তিনি সিরিয়া ও হেজাজের বিভিন্ন অঞ্চল ও তাঁর অধীনে আনেন। ৩৬২ হিজরীতে (৯৭২খ্রি:) মুয়িজ্জ কায়রো প্রবেশ করেন এবং কায়রোকেই তাঁর রাজধানী হিসাবে গ্রহণ করেন। ৩৬৫ হিজরীতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর শাসনামলে মিশরে শিয়া শাসকদের যে সকল উৎসবাদি প্রচলিত হয় তার অন্যতম ছিল ঈদে মীলাদুন্নবী উৎসব [21]।
আল মুয়িজ্জ এর প্রচলিত এই ঈদে মীলাদুন্নবী ও অন্যান্য জন্মদিন পালন ও উদযাপন পরবর্তী প্রায় ১০০ বৎসর কায়রোতে শিয়াদের মধ্যে এই উৎসব চালু থাকে। ৪৮৭ হি: (১০৯৪ খ্রি:) ফাতেমী খলীফা আল-মুসতানসিরের মৃত্যু হলে সেনাপতি আল-আফযাল ইবন বদর আল-জামালীর সহযোগিতায় মুস্তানসিরের ছোট ছেলে ২১ বৎসর বয়স্ক আল-মুস্তা‘লী খলীফা হন। সেনাপতি আফযাল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েন। তিনি ৪৮৮ হিজরীতে ফাতেমীদের প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নবী উৎসব ও অন্যান্য জন্মদিনের উৎসব বন্ধ করে দেন। পরবর্তী কোন কোন ফাতেমী শাসক পুনরায় এ সকল উৎসব সীমিত পরিসরে চালু করেন, তবে ক্রমান্বয়ে ফাতেমীদের প্রতিপত্তি সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং এ সকল উৎসব জৌলুস হারিয়ে ফেলে[22]।
●| ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রাথমিক উদযাপন: অনুষ্ঠান পরিচিতি আহমদ ইবন আলী আল-কালকাশান্দী (৮২১হি:) লিখেছেন:
‘‘রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে ফাতেমী শিয়া শাসক মীলাদুন্নবী উদযাপন করতেন। তাদের নিয়ম ছিল যে, এ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণে উন্নত মানের মিষ্টান্ন তৈরী করা হত। এই মিষ্টান্ন ৩০০ পিতলের খাঞ্চায় ভরা হতো। মীলাদের রাত্রিতে এই মিষ্টান্ন সকল তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের মধ্যে বিতরণ করা হতো, যেমন প্রধান বিচারক, প্রধান শিয়া মত প্রচারক, দরবারের কারীগণ, বিভিন্ন মসজিদের খতীব ও প্রধানগণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানদির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। এ উপলক্ষে খলীফা প্রাসাদের সামনের ব্যালকনীতে বসতেন। আসরের নামাযের পরে বিচারপতি বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সংগে আজহার মসজিদের গমন করতেন এবং সেখানে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত পরিমাণ সময় বসতেন। মসজিদ ও প্রাসাদের মধ্যবর্তী স্থানে অভ্যাগত পদস্থ মেহমানগণ বসে খলীফাকে সালাম প্রদানের জন্য অপেক্ষা করতেন। এ সময়ে ব্যালকনির জানালা খুলে হাত নেড়ে খলিফা তাদের সালাম গ্রহণ করতেন। এরপর কারীগণ কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং বক্তাগণ বক্তৃতা প্রদান করতেন। বক্তৃতা অনুষ্ঠান শেষ হলে খলীফার সহচরগণ হাত নেড়ে সমবেতদের বিদায়ী সালাম জানাতেন। খিড়কী বন্ধ করা হতো এবং উপস্থিত সকলে নিজ নিজ ঘরে ফিরতেন। এভাবেই তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিনও পালন করত…”[23]।
আহমদ ইবন আলী আল-মাকরীযী (৮৪৫হি:) এ সকল জন্মদিন উৎসবের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন:
‘‘এ সকল জন্মদিনের উৎসব ছিল তাদের খুবই বড় ও মর্যাদাময় উৎসব সময়। এ সময়ে মানুষেরা সোনা ও রূপার স্মারক তৈরী করত, বিভিন্ন ধরণের খাবার, মিষ্টান্ন ইত্যাদি তৈরী করে বিতরণ করা হতো”[24]।
●| ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন: প্রকৃত প্রবর্তন ও ব্যাপক উদযাপন:
এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হিজরী ৪র্থ শতাব্দী থেকেই ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনের শুরু হয়। তবে এখানে লক্ষণীয় যে, কায়রো এই উৎসব ইসলামী বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েনি। সম্ভবত: ইসমাঈলীয় ফাতেমী শিয়াদের প্রতি সাধারণ মুসলিম সমাজের প্রকট ঘৃণার ফলেই তাদের এই উৎসবসমূহ অন্যান্য সুন্নী এলাকায় জনপ্রিয়তা পায় নি বা সামাজিক উৎসবের রূপ গ্রহণ করে নি। তবে ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায় ৬ষ্ঠ হিজরীর দ্বিতীয়ার্ধ (৫৫০-৬০০) থেকেই মিশর, সিরিয়া বা ইরাকের ২/১ জন ধার্মিক মানুষ প্রতি বৎসর রবিউল আউআল মাসের প্রথমাংশে বা ৮ বা ১২ তারিখে খানাপিনার মাজলিস ও আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ পালন করতে শুরু করেন[25]।
তবে যিনি ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তক হিসাবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এবং যিনি ঈদে মীলাদুন্নবীকে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম উৎসব হিসাবে প্রতিষ্ঠা দানের কৃতিত্বের দাবিদার তিনি হচ্ছেন ইরাক অঞ্চলের ইরবিল প্রদেশের শাসক আবু সাঈদ কূকবুরী (মৃত্যু: ৬৩০হি:)।. পরবতী পৃষ্ঠাগুলিতে আমরা তার জীবনী ও ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনে তাঁর পদ্ধতি আলোচনা করব। কিন্তু তার আগে আমরা যে যুগের প্রেক্ষাপটে তিনি এই উৎসবের প্রচলন করেন তা আলোচনা করব।
●| যুগ পরিচিতি: হিজরী ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতক:৪র্থ হিজরী শতকে ইসলামী জগতের অবস্থা কি ছিল তা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। পরবর্তী সময়ে অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। ৬ষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ৭ম হিজরী শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়কাল ছিল মুসলিম উম্মার জন্য দুর্দিন ও মুসলিম ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ সময়ে আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও বাইরের শত্রুর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয় বিশাল মুসলিম রাজত্বের অধিকাংশ এলাকা।৬ষ্ঠ হিজরী শতাব্দী মাঝামাঝি এসে আমরা দেখতে পাই যে, এ সকল অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি আরো একটি কঠিন সমস্যা মুসলিম উম্মাহর সামনে এসেছে, তা হলো বাইরের শত্রুর আক্রমণ, বিশেষ করে পশ্চিম থেকে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের আক্রমণ এবং পূর্ব থেকে তাতার ও মোগলদের আক্রমণ।ক্রুসেড যুদ্ধের শুরু হয় হিজরী ৫ম শতাব্দীর (খ্রীষ্টিয় একাদশ শতাব্দীর) শেষদিকে। ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপে খ্রিষ্টান ধর্মযাজকগণ বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী প্রচারণা করতে থাকেন। তারা বলতে থাকে যে, মুসলিমগণ মূর্তিপূজা করেন, তাঁরা মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুজা করেন, নরমাংশ ভক্ষণ করেন, যিশুখ্রিষ্টের অবমাননা করেন ইত্যাদি কথা সারা ইউরোপে প্রচারিত হতে থাকে। পাশাপাশি মুসলিমদের স্পেন বিজয় ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ বিজয় ইউরোপের খ্রিষ্টান শাসকদেরকে ভীত করে তোলে। তাঁরা তাঁদের অভ্যন্তরের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জাতিগত বিভেদ ও শত্রুতা ভুলে পোপের নেতৃত্বে প্যালেষ্টাইনের পবিত্রভূমি উদ্ধারের নামে লক্ষ লক্ষ সৈনিকের ঐক্যবদ্ধ ইউরোপীয় বাহিনী নিয়ে মুসলিম সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। ৪৯১ ও ৪৯২ হিজরী সালে (১০৯৭ ও ১০৯৮ খ্রি:) প্রথম ক্রুসেড বাহিনীর দশ লক্ষাধিক নিয়মিত সৈনিক ও স্বেচ্ছাসেবক এশিয়া মাইনর ও সিরিয়া এলাকায় বিভিন্ন মুসলিম দেশে হামলা করেন। এই হামলায় প্রায় ২০ সহস্রাধিক মুসলিম সাধারণ নাগরিক নিহত হন। ক্রুসেড বাহিনী নির্বিচারে নারীপুরুষ ও শিশুদের হত্যা করেন। তাঁরা ক্ষেতখামার ও ফসলাদিও ধ্বংস করেন। এই হামলার মাধ্যমে এশিয়া মাইনর ও সিরিয়া-প্যালেষ্টাইনের বিভিন্ন রাজ্য খ্রিষ্টানরা দখল করে এবং কয়েকটি খ্রিষ্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে [26]।পরবর্তী ২০০ বৎসরের ইতিহাস ইউরোপীয় খ্রিষ্টান বাহিনীর উপর্যুপরি হামলা ও মুসলিম প্রতিরোধের ইতিহাস। এ সময়ে খ্রিষ্টানগণ মিসর, সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চলে খ্রিষ্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিধাবিভক্ত মুসলিম শাসকগণ বিভিন্নভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং সর্বশেষ ৬ষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর শেষদিকে সালাহুদ্দীন আইউবী অধিকাংশ খ্রিষ্টান রাজ্যের পতন ঘটান এবং প্যালেষ্টাইন ও অধিকাংশ আরব এলাকা থেকে ক্রুসেডিয়ারদের বিতাড়িত করেন [27]।
এরপরেও মিশর, সিরিয়া ও লেবানন এলাকায় ক্রুসেডারদের কয়েকটি ছোট ছোট খ্রিষ্টান রাজ্য রয়ে যায়। তদুপরি ইউরোপ থেকে মাঝেমাঝে ক্রুসেড বাহিনীর আগমন ও বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চলে আক্রমণ অব্যহত থাকে [28]।
যে সময়ে মুসলিমরা দখলদার ক্রুসেড বাহিনীর কবল থেকে বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চলকে মুক্ত করছেন, সে সময়ে, ৭ম হিজরী শতকের (১৩শ খ্রীষ্টিয় শতকের) শুরুতে মুসলিম সম্রাজ্যের পূর্বদিক থেকে তাতারদের বর্বর হামলা শুরু হয়। চেঙ্গিশ খানের নেতৃত্বে তাতার বাহিনী সর্বপ্রথম ৬০৬ হিজরীর দিকে (১২০৯ খ্রি:) মুসলিম রাজত্বের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালাতে শুরু করে। শীঘ্রই তারা বিভিন্ন মুসলিম জনপদে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করতে থাকে। মানব ইতিহাসের বর্বরতম হামলায় তারা এসকল জনপদের সকল প্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। বস্ত্তত: তাতাররা মধ্য এশিয়া, পারস্য, ইরাক, সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের অধিকাংশ মুসলিম জনপদ শাব্দিক অর্থেই বিরাণ করে দেয়। পরবর্তী শতাব্দীর ঐতিহাসিক আল্লামা যাহাবী (মৃত্যু ৭৪৮হি:) বলেন:
‘‘তাতাররা এসকল জনপদে কত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে এ প্রশ্ন অবান্তর ও অর্থহীন, বরং প্রশ্ন করতে হবে: তারা কতজনকে না মেরে বাঁচিয়ে রেখেছিল”[29]।
৬৫৬ হিজরীতে (১২৫৮খ্রি:) হালাকু খানের নেতৃত্বে তাতাররা মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ও রাজধানী বাগদাদ ধ্বংস করে। ৪০ দিনব্যপি গণহত্যায় তারা বাগদাদের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে [30]। পরবর্তী শতাব্দীর ঐতিহাসিক আল্লামা যাহাবী (মৃত্যু ৭৪৮হি:) লিখেছেন:
‘‘হালাকু মৃতদেহ গণনা করতে নির্দেশ দেয়। গণনায় মৃতদেহের সংখ্যা হয় ১৮ লক্ষের কিছু বেশী। তখন (নিহতের সংখ্যায় তৃপ্ত হয়ে) হালাকু হত্যাকান্ড থামানোর ও নিরাপত্তা ঘোষণার নির্দেশ দেয়”[31]।
বাইরের শত্রুর পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ কলহ ও দুর্বলতা এ যুগে মুসলিম সমাজগুলোকে বিপর্যস্ত করে তোলে। কোন কোন আঞ্চলিক শাসক নিজের এলাকায় কিছু শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা আনতে পারলেও সার্বিকভাবে বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে।[32]
পরবতী শতাব্দীর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসীর (৭৭৪হি:), যিনি নিকট থেকে এ যুগের ঘটনাবলী জেনেছেন, তাতারদের নারকীয় বর্বরতার বর্ণনা দেওয়ার একপর্যায়ে লিখেন:
৬১৭হিজরী (১২২০খ্রি:) চেঙ্গিশ খান ও তার বাহিনীর বর্বর হামলা সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করে। ১ বৎসরের মধ্যে তারা প্রায় সমগ্র মুসলিম জনপদ দখল করে নেয় (বাগদাদ ও পার্শ্ববতী এলাকা বাদ ছিল)। … তারা এ বছরে বিভিন্ন বড়বড় শহরে মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অগণিত মানুষকে হত্যা করে। মোটের উপর তারা যে দেশেই প্রবেশ করেছে সেখানকার সকল সক্ষম পুরুষ ও অনেক মহিলা ও শিশুকে হত্যা করেছে। গর্ভবতী মহিলাদেরকে হত্যা করে তাদের পেট ফেড়ে গর্ভস্থ শিশুকে বের করে হত্যা করেছে। যে সকল দ্রব্য তাদের প্রয়োজন তা তারা লুটপাট করেছে। আর যা তাদের দরকার নেই তা তারা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। ঘরবাড়ী সবই তারা ধ্বংস করেছে বা পুড়িয়ে দিয়েছে। … মানব সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত এত ভয়াবহ বিপর্যয় ও বিপদ কখনো মানুষ দেখেনি .. ইতিহাসে এতবড় বর্বরতার কোন বিবরণ আর পাওয়া যায় না [33]।
এভাবে তাতারদের আগ্রাসন, ক্রুসেড হামলা, সামগ্রিক আইন শৃঙ্খলার অবনতি সমগ্র মুসলিম জাহানকে এমনভাবে গ্রাস করে যে, ৬২৮ হিজরীর (১২৩১খ্রি:) পরে অনেক বছর মুসলিমরা ইসলামের পঞ্চম রোকন হজ্জ পালন করতে পারে নি। ঐতিহাসিক ইবনে কাসীর লিখছেন:
‘‘৬২৮ হিজরীতে মানুষেরা হজ্জ আদায় করেন। এরপরে যুদ্ধবিগ্রহ, তাতার ও ক্রুসেডিয়ারদের ভয়ে আর কেউ হজ্জে যেতে পারেন নি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন”[34]।
ইসলামী অনুশাসনের অবহেলা, পাপ-অনাচারের প্রসার, প্রশাসনিক দুর্বলতা, জুলুম অত্যাচারের সয়লাবের কারণে মুসলিমদের মধ্যে নেমে আসে ঈমানী দূর্বলতা। তাতারভীতি তাদেরকে গ্রাস করে। আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেছেন:
‘‘তাতারভীতি মানুষদেরকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, একজন তাতার সৈনিক একটি বাজারে প্রবেশ করে, যেখানে শতাধিক মানুষ ছিল, তাতার সৈন্যটি একজন একজন করে সকল মানুষকে হত্যা করে বাজারটি লুট করে, খুনের এই হোলি খেলার মধ্যে একজন পুরুষও ঐ তাতারটিকে বাধা দিতে আগিয়ে আসতে সাহস পায়নি”[35]।
এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, হিজরী ৬ষ্ট ও ৭ম শতকের মুসলিম সমাজে চরম সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি বিরাজ করছিল, যা ধমীয়, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও স্থবিরতা ও অবক্ষয় নিয়ে আসে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার অঙ্গনে স্থবিরতা আসে। মুসলিম সাম্রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন খ্রিষ্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে মুসলিমগণ বিভিন্ন খ্রিষ্টান ধর্মীয় ও সামাজিক আচার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হন। অপরদিকে পূর্বাঞ্চলীয় তাতার ও অন্যান্য কাফির সম্প্রদায়ের মানুষেরা মুসলিম সম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা দখল করে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের আচার আচরণ ও বিশ্বাস-কুসংস্কার মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে। সর্বপোরি শিক্ষার ক্ষেত্রে স্থবিরতা আসার ফলে সমাজের মধ্যে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও বিভিন্ন ধরণের কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক ভাবে।
সবকিছুর মধ্যেও কিছু কিছু রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা ও তৎকালীন আলেম সমাজের চেষ্টায় ইলমের প্রসার ও ইসলামী মূল্যবোধের দিকে আহবানের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। তবে বিশাল মুসলিম সমাজের প্রয়োজনের তুলনার আলেম ও সংস্কারকদের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এছাড়া সার্বিক সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞতা ও অবক্ষয়ের ফলে সমাজে আলেমদের আবেদন কমতে থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরণের ইসলাম বিরোধী কর্ম সমাজে প্রবেশ করে। সমাজের সাধারণ মানুষই নয় ধার্মিক মানুষেরাও এমন অনেক কাজ করতে থাকেন যা শরী‘আত সঙ্গত নয় এবং ইসলামের প্রথম যুগে কোন ধার্মিক মানুষের কাজ ছিল না। যেমন তৎকালীন সময়ে সূফীদের মধ্যে ‘‘সামা’’ বা গান বাজনার প্রসারের একটি উদাহারণের মাধ্যমে এই অবস্থা ব্যাখ্যা করতে চাই, কারণ মীলাদ অনুষ্ঠানের কর্মকান্ড বুঝতে তা আমাদের সাহায্য করবে।
ইসলামের প্রথম যুগগুলিতে ‘‘সামা’’ বা শ্রবণ বলতে শুধুমাত্র কুরআন শ্রবণ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী, কর্ম ও বাণী শ্রবণকেই বোঝান হত। এগুলিই তাঁদের মনে আল্লাহর ভালবাসা ও নবীর ভালবাসার জোয়ার সৃষ্টি করত। কোন মুসলিম কখনই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য বা হৃদয়ে আল্লাহর ভালবাসা তৈরীর দোহাই দিয়ে গান শুনতেন না। সমাজের বিলাসী বা অধার্মিক মানুষদের মধ্যে বিনোদন হিসাবে গানবাজনার প্রচলন ছিল, কিন্তু আলেমগণ তা হারাম জানতেন। কখনই এ সকল কর্ম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে গণ্য হয় নি। তাঁরা সকলেই মূলত: কুরআন সুন্নাহর গভীর জ্ঞান অর্জন করা ও অর্জিত জ্ঞানের আলোকে জীবন পরিচালনার উপর গুরুত্ব প্রদান করতেন [36]।
কিন্তু পরবর্তী কালে মুসলিম বিশ্বের সার্বিক অস্থিরতা, ফিকহ, হাদীস ও অন্যান্য ইসলামী জ্ঞান চর্চার অভাব, বিজাতীয় প্রভাব ইত্যাদি কারণে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অনাচার প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ক্রমে ক্রমে গান বাজনা, নর্তন কুর্দন ইত্যাদি অনাচার ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গান বাজনা এক পর্যায়ে ধার্মিক মানুষদের ধর্মকর্মের অংশ হয়ে যায়। তারা একে ‘‘সামা’’ বা শ্রবণ বলতেন। তারা গানের তালে তালে নাচতে থাকতেন এবং অনেকেই আবেগে নিজের পরিধেয় কাপড় চোপড় ছিড়ে ফেলতেন। কেহ বাজনা সহ, কেহবা বাজনা ব্যতিরেকে গান গেয়ে ও নেচে নিয়মিত ‘সামা’র মাজলিস করতেন। কারণ তাদের ধারণা ছিল যে, এ সকল গান গজল আল্লাহ ভক্তদের মনে আল্লাহর ভালবাসার জোয়ার সৃষ্টি করত। তাঁরা ‘সামা’কে আল্লাহ প্রাপ্তির ও আল্লাহ প্রেম অর্জনের অন্যতম মাধ্যম মনে করতেন। আর এটা জানা কথা যে, সমাজে যখন কোন কাজ ব্যাপক ভাবে প্রচলিত হয়ে যায়, বিশেষত: ধার্মিক ও ভাল মানুষদের মধ্যে, তখন অনেক আলেম এসকল কর্মের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রদান করেন এবং এগুলোকে জায়েয বা ইসলাম সম্মত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। গান বাজনার ক্ষেত্রেও এই অবস্থা হয়। কোন কোন আলেম সূফীদের প্রতি সম্মান হেতু এবং হৃদয়ে গানের ফলে যে আল্লাহর ভালবাসার তথাকথিত আবেশ ও আনন্দ পাওয়া যায় তার দিকে লক্ষ্য করে এগুলোর পক্ষে মিথ্যা ওকালতি করেছেন। যেমন, প্রখ্যাত দার্শনিক গাযালী (৫০৫হি:)।. তিনি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’’ গ্রন্থে সুদীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে গান বাজন ও নর্তন কুর্দনের পক্ষে যুক্তি প্রমান পেশ করার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, এসকল কর্ম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ ও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের যুগে প্রচলিত বা পরিচিত ছিল না [37]।
অপরদিকে সত্যনিষ্ঠ আলেম সমাজের বহুল প্রচলনকে মেনে নিতে পারেন নি। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ ও সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের যুগকেই প্রামাণ্য বলে মনে করেছেন, এ সকল যুগে যেহেতু গান বাজনা, নর্তন কুর্দন ইত্যাদি কখনই আল্লাহর পথের পথিকদের কর্ম ছিল না, বরং সমাজের পাপী অশ্লীলতায় লিপ্ত লোকেদের কর্ম ছিল, তাই সূফী ও জাহেলদের মধ্যে বহুল প্রচলন সত্বেও তাঁরা এগুলিকে মেনে নেন নি, বরং তা রোধ করার চেষ্টা করেছেন। তবে পূর্বোক্ত ইসলামী বিশ্বের সার্বিক অবস্থা সামনে নিলে সে যুগের আলেমদের সংস্কারমূলক কাজের সীমাবদ্ধতা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। তাঁরা বাষ্ট্রীয় সমর্থন থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সমাজে অজ্ঞতার প্রভাব ছিল বেশী। তা সত্বেও তাঁরা সেই যুগে ইসলামের আলোর মশাল জ্বালিয়ে রেখেছেন, সমাজের মানুষদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। তাঁরাই ছিলেন দ্বীনের সঠিক মশাল। আল্লাহ তাদেরকে রহমত করুন ।
●| প্রবর্তক: ব্যক্তি ও জীবন:আগেই বলেছি যে, মিশরের শিয়া শাসকগণ প্রথম ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তন করেন। ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষ দিকে মিশরের বাইরেও কোন কোন ধর্মপ্রান মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতি বৎসর রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম দিকে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করেন। তবে ইরবিলের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরীর মাধ্যমেই এই উৎসবকে সুন্নী জগতে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় উৎসবে পরিণত হয়। এজন্য বিভিন্ন সীরাতুন্নবী বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকগণ তাঁকেই ঈদে মীলাদুন্নবীর প্রবর্তক হিসাবে উল্লেখ করেছেন; কারণ তিনিই প্রথম এই উৎসবকে বৃহৎ আকারে পালন করতে শুরু করেন এবং সাধারণের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন ঘটান। আল্লামা মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ সালেহী শামী (মৃত্যু: ৯৪২হি: ১৫৩৬খ্রি:) তার প্রখ্যাত সীরাতুন্নবী গ্রন্থে- (সীরাহ শামীয়া) ঈদেমীলাদুন্নবী পালনের আহবান জানাতে যেয়ে আলোচনার প্রথম দিকে লিখছেন:
‘‘সর্বপ্রথম যে বাদশাহ এই উৎসব উদ্ভাবন করেন তিন হলেন, ইরবিলের শাসক আবু সাঈদ কূকুবূরী…’’[38]
=======================
[15]ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, প্রাগুক্ত ৭/৬৪২, ৬৫৩, ৮/৩, ৯, ১১, ১৫, ১৬,. ১৭, …. .
[16]আগাখানী, বুহরা, বাতেনী শিয়াদের পূর্বপূরুষ।
[17]বিস্তারিত দেখুন: মাহমূদ শাকির, আত-তারিখুল ইসলামী (বাইরূত, আল-মাকতাব আল-ইসলামী, ১ম সংস্করণ ১৯৮৫ ইং) ৬/১১১-১১২, ১২৩-১২৪, ১৩৬-১৩৭, ১৬৫-১৬৮, ১৮০-১৮২, ১৯৩-১৯৬, ২০৮-২০৯, ২৩৩, ২##
Lisourse;-
  • https://www.facebook.com/akhiraterjibon/photos/a.299496113434642.84678.241481935902727/877767532274161/?type=1&theater

  • (Share this)

Friday 2 January 2015

পুরুষের জন্যই পর্দার আয়াত প্রথমে নাযিল হয়েছে



পর্দা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই ফরজ !!!

আল্লাহ নারীদের মত করে পুরুষদের হিজাব করতে বলেনি তার মানে এই নয় যে পুরুষদের হিজাব নেই।

নারীদের যেমন সৌন্দর্য ঢাকার জন্য পর্দা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে , ঠিক তেমনি পুরুষদেরকেও পর-নারীর
সৌন্দর্য দেখা থেকে নিজের চোখ ও অন্তরের পর্দা করতে বলা হয়েছে।

সত্যি কথা বলতে পুরুষের জন্যই পর্দার আয়াত প্রথমে নাযিল হয়েছে। 
পরবর্তীতে নারীর পর্দার আয়াত নাযিল হয়েছে।

সুরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে(http://quran.com/24/30) মহান আল্লাহ্ বলেছেন-
"মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত
রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য
খুব পবিত্রতা আছে।"

এর পরের আয়াত অর্থাৎ সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াত(http://quran.com/24/31) মহান
আল্লাহ্ নাযিল করেছেন নারীদের পর্দার জন্য।

এখন কোন পুরুষের চোখ যদি কোন নারীর সৌন্দর্য দর্শন করার
অনুমতি পায়, তাহলে তাহল একমাত্র নিজের স্ত্রীর। 

★★★ একজন পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন নারীর চেহারার
সৌন্দর্য দেখা বা অন্য কোন নারীর দেহ
আকৃতি অন্তরে অনুভব করা 'হারাম'। ★★★

এ সম্পর্কে মহানবী [স:] বলেছেন , 
"যদি কোন মহিলার দিকে হঠাৎ
নজর পড়ে যায় , তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং তার
দিকে আর দ্বিতীয়বার তাকাবে না।"

আল্লাহ পবিত্র কুরানের সুরা আন-নুরের
৩০নং আয়াতে নারীদের পর্দার ব্যাপারে নিষেধ করার
আগে পুরুষের চোখের পর্দা হেফাজত করার নির্দেশ
দিয়েছেন।

কেউ যখন তা জেনেও এই নিষেধ মান্য
করা থেকে নিজেকে দূরে রাখলো না তখন সে যেন
কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ কে অবজ্ঞা করল।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেছেনঃ
"এতে কোন সন্দেহ নেই যে,
যারাই আমার আয়াত সমুহকে অবজ্ঞা করবে,
আমি তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব।
তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আমি সেখানে নতুন
চামড়া দিব, যাতে তারা আযাব পূর্ণভাবে আস্বাদন
করতে থাকে। 
নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।
(সুরা আন নিসাঃ ৫৬)(http://quran.com/4/56) ৷

Collected 

উল্লেখ্য: " যে রাসূল সাঃ এর আদেশ মানছে, সে মূলত আল্লাহর
আদেশই মানছে "— সূরাহ নিসা: ৮০
অনুরুপভাবে ,
" আর যে রাসূল সাঃ এর আদেশ মানল না, সে আল্লাহর আদেশেরই
অবাধ্য হল "— বুখারী, মুসলিম ৷
[courtesy-https://www.facebook.com/akhiraterjibon/photos/a.781286215255627.1073741836.241481935902727/876352915748956/?type=1&theater]